আমাদের প্রার্থনা কিভাবে ভগবানের পৌঁছায়? (সনাতন বৈদিক সিদ্ধান্ত)
- Krishnashish Chakraborty
- Dec 23, 2020
- 3 min read
প্রশ্নকর্তা - ভগবানের নিকট আমাদের প্রার্থনা কিভাবে পৌঁছায়?
জগৎগুরু শঙ্কারাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী'জীঃ-
আপনার যদি কেউ স্তুতি বা প্রশংসা করে আপনার সামনে, যদি আপনি বধির না হন তাহলে কি সেটা আপনার অব্দি পৌঁছাবে কিনা? — অবশ্যই পৌঁছাবে।
ঠিক তদ্রুপ, প্রার্থনাও ভগবানের নিকট পৌঁছায়।
দেবতারা হলো ব্যাপক। 'গীতার ১৩নং অধ্যায় বলা হয়েছে, .............

"সর্বতঃ পাণিপাদং তত্সর্বতোক্ষিশিরোমুখম্৷
সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি৷৷"
অর্থাৎ , ভগবান বা ওনার অভিব্যক্তি স্বরূপ যে দেবশক্তিরা আছে তাঁদের যেকোনো স্থানে যে কেউ যদি প্রার্থনা করে এমনকি বাণীর আলম্বন না নিয়েও অর্থ্যাৎ হৃদয়েও যদি প্রার্থনা করা হয় তাতেও তাঁরা সেটা শুনতে পায় যেহেতু তাঁরা অন্তর্যামী। উপনিষদ বলা হয়েছে আমাদের হৃদয়েও তাদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। দেবীদেবতাদের মুখ না খুলে যদি কেউ প্রার্থনা করে অর্থাৎ, মধ্যমা বাক বা পশ্যন্তি বাক ব্যতীতও যদি প্রার্থনা করা হয় তাতেও দেবীদেবতারা সেটা শুনতে পান। তাঁরা অন্তর্যামী হয় ও তাদের স্বরূপও বিরাট ব্যাপক হয়।
পঞ্চভূতের দেবতারাই তো পঞ্চ-অধিদৈবের স্বরূপ যারা সর্বব্যাপক। শাস্ত্রে বলা আছে, মায়ার নিয়ামক পরমদেবতা হলেন পরমাত্মা। দিব্যশক্তি সম্পন্ন দেবতাদের কেউ বৈখরী বাকদ্বারা সুন্দর সুমধুর স্তুতি করলে বা মনে মনে স্তুতি করলেও তারা সেটা শুনতে পান। এই বিষয়ে খুব অসাধারণ বলেছেন সন্ত কবিরদাস'জী,,,,,
" চিটি কে পগ নুপুর বাজে, উহ ভি সাহেব শুনতা হ্যায়।" অর্থাৎ উনি বলছেন, পিপীলিকার পায়ে নুপুর বাঁধবেন। মানে কতটা সূক্ষ হবে ! ভেবে দেখুন ! তো পিঁপড়ের পায়ে নুপুর যা বাজলে সেটাও ভগবান অবশ্যই শুনতে পান।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে উনি সেই মুহূর্তে সেটা(প্রার্থনা) পূরণ করেন না কেন!
এমতাবস্থায় ভগবান বিচার করে দেখেন এই প্রার্থনা যদি ঐ মুহূর্তে পূর্ণ করা হয় তাহলে কি তার ভক্তের ভালো হবে নাকি খারাপ হবে ! কারণ সেতো নির্বোধ ! একটি উদাহরণ দিচ্ছি, আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে ছিলাম তখন পড়েছিলাম,,
'The Golden Touch' — একজন রাজা যক্ষের প্রবল উপাসনা দ্বারা যক্ষকে সিদ্ধ করলেন।
যক্ষ বললেন কি চাই বলো? উনি বললেন আমি যা স্পর্শ করবো তা যেনো সোনায় রূপান্তরিত হয় , যক্ষ বললেন তথাস্তু। ―তিনি নিজের রাজমহল কে স্পর্শ মাত্র সোনার বানিয়ে ফেললেন , মেয়েকে ও ভার্যাকেও আকস্মিক স্পর্শ করতে তারাও সোনা হয়ে গেল অর্থাৎ, জড় পদার্থে তাঁদের রূপান্তর হলো। অন্নকে ছুলেন তাও সোনা হলো। শেষে না খেতে পেয়ে মরলেন।"– দেবতার দেওয়া আশীর্বাদ ওই রাজার জন্য অভিশাপ সিদ্ধ হয়ে গেল। এইজন্য দেবীদেবতা এটা বিচার করে আশীর্বাদ দেয় যে ভবিষ্যতে এর জন্য যেন কাম্য আশীর্বাদ অভিশাপ হয়ে না দাঁড়ায়। কখনো কখনো এরকমও মনে হয় দেবতা আমাদের প্রার্থনা শুনছেন তো !― হয়তো আমরা আমাদের ক্ষমতার বা সীমার বাইরে গিয়ে কিছু চাইছি। যেখানে ডাল ভাতে ভালোই চলে যায় কিন্তু আমি কোটিপতি হতে চাইছি। এরকম সীমার বাইরে কিছু চাইলে দেবতারা শোধন করে প্রার্থনা পূরণ করেন। কখনো প্রার্থনা পূরণ হতে বিলম্বও হয়। আমরা যেখানে উপস্থিত দেবীদবতারাও সেখানে উপস্থিত কারণ তারাও সর্বব্যাপক। ধরুন বিধিবত যজ্ঞ হচ্ছে ১০০০ জায়গায় " ইন্দ্রায় স্বাহা, ইদম ইন্দ্রায় নমঃ।" তিনি ১০০০ জায়গায় সূক্ষরূপ ধারণ করে সেই হবি গ্রহণ করেন। মহাভারতে এক ঘটনার উল্লেখ আছে বৃহস্পতি বিষ্ণুর যজ্ঞ করলেন ভগবান তা গ্রহণও করলেন।
কিন্তু বৃহস্পতি বললেন,― না উনি কেনো আমায় দেখা দিলেন না, আমি এতো কষ্ট করে যজ্ঞ করলাম এটা উচিৎ নয়। আমি যজ্ঞ করা ছেড়েই দেব! তখন ঋষিরা ওনাকে বোঝালেন আপনি উন্মত্ত হবেন না। উনি আপনার হবি গ্রহণ করেছেন কিন্তু সেই মুহূর্তে ওনার দর্শনলাভ করতে গেলে দিব্যদৃষ্টি লাগবে, যা লাভ করবার জন্য ভীষণ তপস্যা প্রয়োজন। আপনি নাস্তিকতার পরিচয় দেবেন না আচার্য্য। তাহলে ভাবুন দেবগুরুর মধ্যেও সেই সময় সেই ক্ষমতা ছিলনা যে সেই দিব্যরুপ দর্শন করতে পারেন। আপনারা তো এই শ্লোকটি শুনেছেন , ""যত্র যত্র রঘুনাথ কীর্তনম,তত্র তত্ৰ কৃত মস্তকাঞ্জলিম ৷ বাষ্পবারীপরিপূর্নলোচনম মারুতিম নমত রাক্ষসান্তকম।।"– অর্থাৎ যেখানে যেখানে শ্রীরামের নাম কীর্তন করা হয় সেখানে সেখানে হনুমানদেব সূক্ষরূপে বিদ্যমান থাকেন। তো তিনি আমাদের কেন দর্শন দেন না কেন ! যাদের ওপর তিনি অনুগ্ৰহ করেন, যারা দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন তারাই ওনাকে দেখতে পায়।
উপনিষদ অনুসারে, কায়াব্যূহ ও প্রকাশকব্যূহ দেবতারা অন্তর্যামী হন। যেখানে যেখানে ওনাদের প্রার্থনা করা হয় ওনারা যেকোনো রূপে উপস্থিত হয়ে অন্তর্যামীরূপে ভক্তের মনের ভাব তিনি ঠিকই জানতে পারেন এবং ভক্তের ভাবের পূর্তিও করেন।
[ অনুবাদে:- সুপ্রতিম চক্রবর্তী ]
প্রচারে:- Dhaarmachakra Bengal
Commentaires